চট্টগ্রাম থেকে সংসদে যেতে চান ৮৭ নারী
প্রকাশিত : ২০:৪৬, ২২ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ২০:৫০, ২২ জানুয়ারি ২০১৯
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর পর সংরক্ষিত নারী আসনে দল থেকে মনোনয়ন পেতে এবার বিপুল সংখ্যক নারী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আসতে চান— অনেক নতুন মুখ। এবার চট্টগ্রাম থেকে ৮৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।
এবারে বেশির ভাগ প্রার্থী হলেন সাবেক সংসদ সদস্যরা। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, সাবেক ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নারীনেত্রী দলের টিকেট পেতে মরিয়া হয়ে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদে উল্লেখযোগ্য নতুন মুখের আগমনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ক্লিন ইমেজের বেশ কিছু প্রার্থী মনোনয়নপত্র কিনেছেন। বিপুল উৎসাহে পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে যেতে চান সংসদে। এবারের চট্টগ্রামের অন্যতম প্রার্থী হলেন নারী উদ্যোক্তা ও শিক্ষাবিদ ড. সালেহা কাদের।
চট্টগ্রাম থেকে কে কে সংসদে যাচ্ছেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম হয়েছে। আগের সংসদগুলোতে নারী আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকতেন হাতে গোনা কয়েকজন। কিন্তু একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ থেকে চট্টগ্রামের ৮৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। গত রোববার ছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন মূল দলের নেত্রীদের পাশাপাশি মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, নগর ও জেলা পর্যায়ের সাবেক নেত্রীরা। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্তরাও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। আছেন সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি। বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি সাবেক কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সংরক্ষিত নারী আসনে চট্টগ্রাম থেকে কারা আসছেন, কাদেরকে সংসদে যাওয়ার টিকেট দিতে পারে এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে এবার রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন পত্র বিক্রি হয়েছে যা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। যেহেতু আওয়ামীলীগ একটি বড় দল সুতরাং এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই।
এবার চট্টগ্রাম থেকে নারী সংসদ সদস্য হিসেবে কারা আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে মন্তব্য করার মতো সময় এখনও আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনা প্রার্থীদের যোগ্যতার নিরিখে সংসদের টিকেট দেবেন।’
উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম পেয়েছিল তিনজন নারী সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ থেকে দু’জন এবং জাতীয় পার্টি থেকে একজন। নবম সংসদে ছিলেন দু’জন। এবার চট্টগ্রাম থেকে দু-তিনজন সংসদ সদস্য হতে পারেন এমন আলোচনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগ এখন জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় সবাই কয়েক দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সাবেক নারী সংসদ সদস্যরা নিজেদের এলাকায় উন্নয়ন ও দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সফলতা তুলে ধরছেন কেন্দ্রের কাছে। বসে নেই নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। তাঁরাও নিজেদের কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করছেন।
দশম সংসদে সংরক্ষিত আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান ও সাবিহা নাহার বেগম এবং জাতীয় পার্টি থেকে বেগম মাহজাবীন মোরশেদ। নবম সংসদে বেগম চেমন আরা তৈয়ব ও হাসিনা মান্নান আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানকারীদের মধ্যে অন্যতম রয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য চেমন আরা বেগম, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, বরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. সালেহা কাদের, সাবিহা নাহার বেগম ও হাসিনা মান্নান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জোবাইদা নার্গিস খান, মনোয়ার হাকিম আলী, অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী, নূর জাহান চৌধুরী, দিলোয়ারা ইউসুফ, অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত,শাহিদা আকতার জাহান, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, অ্যাডভোকেট রেহেনা কবীর রানু, রেখা আলম চৌধুরী, শামীমা হারুন লুবনা, ফেরদৌস বেগম মুন্নী, আনজুমান আরা চৌধুরী, ফিরোজা বেগম, আঞ্জুমান আরা বেগমসহ ৮৭ নারী।
নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে এবারের অন্যতম প্রার্থী নারী উদ্যোক্তা, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক ড. সালেহা কাদের একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চাই। এর মধ্যে শিক্ষা, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মানবিক মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে আমি সংসদে যেতে চাই। মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
চেমন আরা বেগম বলেন, ‘নবম সংসদে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর আমার নির্বাচনী এলাকায় (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া-চন্দনাইশ) অনেক উন্নয়নকাজ করেছি। নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকায় উন্নয়নের পাশাপাশি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করে আসছি। আমি টিকেট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
জানা যায়, নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে এবারের সংসদে আওয়ামী লীগ পেতে পারে ৪৩টি আসন। জাতীয় পার্টি চারটি, ঐক্যফ্রন্ট একটি এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল মিলে দুটি আসন পেতে পারে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এরপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া রেকর্ড সংখ্যক চলচ্চিত্র তারকাও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তাঁরা নানাভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এবারই প্রথম সংরক্ষিত আসনে এত বিপুল সংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সংরক্ষিত নারী আসনের জন্যে আওয়ামী লীগ থেকে এক হাজার ৫১০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। গত রোববার মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিনে কয়েকটি ছাড়া সব ফরমই জমা পড়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২৫৭ আসনে এককভাবে জয় লাভ করায় আওয়ামী লীগ সংসদে ৪৩টি সংরক্ষিত নারী আসন পাবে। বিপুল সংখ্যক এই মনোনয়ন প্রত্যাশীর চাপ সামাল দিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজের পক্ষে সুপারিশ করতে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধ করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, এবার সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একেবারেই নিজস্ব সিদ্ধান্তে মনোনয়ন দেবেন। তিনি নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করছেন। বিগত দিনে যেসব জেলায় নারী সংসদ সদস্য দেওয়া হয়নি সেসব জেলাকে তিনি এবার অগ্রাধিকার দেবেন।
এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান, আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের ত্যাগী নেত্রী, বিভিন্ন পেশায় খ্যাতি অর্জন করেছেন এমন কয়েক জনকে সংসদে আনবেন শেখ হাসিনা।
এসি
আরও পড়ুন